সুতার দাম আরো কমল

নারায়ণগঞ্জের টানবাজারে সুতার দামে মন্দাভাব বজায় রয়েছে। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে স্থানীয় বাজারে প্রতি পাউন্ড সুতার দাম মানভেদে ২-১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। মূলত কোরবানি ঈদের পর থেকে বাজারে বেচাকেনা তুলনামূলক কম থাকার কারণে সুতার দাম কমতে শুরু করেছে বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

গতকাল টানবাজারের মোকামগুলো ঘুরে ১০ কাউন্টের প্রতি পাউন্ড সুতা ৪২-৫৪ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। ১৫ দিন আগেও একই কাউন্টের সুতা পাউন্ডপ্রতি ৪৮-৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সে হিসাবে, ১৫ দিনের ব্যবধানে ১০ কাউন্টের প্রতি পাউন্ড সুতার দাম সর্বোচ্চ ৬ টাকা কমেছে। এদিন ২০ কাউন্টের প্রতি পাউন্ড সুতা বিক্রি হয় ৬৭-৮৫ টাকায়। ১৫ দিন আগে এ সুতা পাউন্ডপ্রতি ৭০-৮৭ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। অর্থাৎ ২০ কাউন্টের সুতার দাম পাউন্ডে সর্বোচ্চ ৩ টাকা কমেছে।

এদিকে টানবাজারে এদিন রফতানিযোগ্য ২৪, ২৬, ২৮ ও ৩০ কাউন্টের প্রতি পাউন্ড সুতা ১১২-১১৪ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। ১৫ দিনের ব্যবধানে এসব সুতার দাম পাউন্ডে সর্বোচ্চ ৩ টাকা কমেছে। একই ভাবে এদিন ৪০ কাউন্টের সুতার বেচাকেনা হয় পাউন্ডপ্রতি ১২৪-১২৬ টাকায়। ১৫ দিন আগেও একই কাউন্টের সুতা পাউন্ডপ্রতি ১২৬-১২৮ টাকায় বেচাকেনা হয়েছিল। সে হিসাবে, এ সুতার দাম কমেছে পাউন্ডে ২ টাকা।

টানবাজারে ৮০ কাউন্টের সুতার দামে সবচেয়ে বেশি মন্দাভাব দেখা গেছে। গতকাল স্থানীয় মোকামগুলোয় ৮০ কাউন্টের প্রতি পাউন্ড সুতা ২৪২-২৪৫ টাকায় বিক্রি হয়। ১৫ দিন আগেও এ সুতা পাউন্ডপ্রতি ২৫২-২৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। অর্থাৎ ১৫ দিনে ৮০ কাউন্টের প্রতি পাউন্ড সুতার দাম সর্বোচ্চ ১০ টাকা কমেছে।

স্থানীয় বাজারে সুতার দামে মন্দাভাবের বিষয়ে বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সোলায়মান মিয়া বলেন, গত কোরবানি ঈদের পর থেকে সুতার বাজারে ধারাবাহিক মন্দাভাব বজায় রয়েছে।

বেচাকেনা একেবারে নেই বললেই চলে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এর আগে সুতার বেচাকেনায় বিদ্যমান মন্দাভাব বজায় থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। এসব কারণে টানবাজারে সুতার দাম কমতে শুরু করেছে। দেড় মাসের মধ্যে সুতার দাম দুই দফা কমেছে। এর মধ্যে মোটা সুতার দাম পাউন্ডপ্রতি ২-৩ টাকা কমেছে।

টানবাজারের বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন জানান, বেচাকেনায় মন্দাভাবের জের ধরে অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরাও মোকামে নতুন সুতা তুলছেন না। তার পরও পণ্যটির বাজার পরিস্থিতি গতিশীল করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সুতা ব্যবসায়ী নেসার উদ্দিন কামাল বলেন, টানবাজার থেকে আশপাশের তাঁতিরা সবচেয়ে বেশি সুতা কেনেন। শীত মৌসুম শুরু হওয়ায় তাঁতের কাপড়ের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে সুতার বাজারে। তাঁতিরা সুতা কেনা কমিয়ে দেয়ায় পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে।

টানবাজারের অন্য সুতা ব্যবসায়ী শাহজালাল খোকন বলেন, গত কোরবানি ঈদের পর থেকেই সুতার বাজারে তুলনামূলক মন্দাভাব বজায় রয়েছে। আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে বছরের বাকি সময়ও সুতার বাজারে বিদ্যমান এ মন্দাভাব বজায় থাকতে পারে। দেশের বাজারে সুতার ধারাবাহিক দরপতন ঠেকাতে সরকারের কঠোর উদ্যোগের দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে শাহজালাল খোকন বলেন, দেশের বাজারে তৈরি কাপড় আমদানি সীমিত করা উচিত। তা না হলে সুতার চাহিদা বাড়বে না। ফলে দেশের বাজারে সুতার দামে ধারাবাহিক পতন ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে। স্থানীয় সুতা ব্যবসায়ীরা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *