কৃষিকাজে ব্যবহার উপযোগী ড্রোন তৈরি করলেন মোবাইল মেকার

স্টাফ রিপোর্টার

কৃষিকাজে ব্যবহার উপযোগী ড্রোন তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন দিনাজপুরের ছেলে সবুজ সরদার (১৮)। এ ড্রোন দিয়ে ফসলের ক্ষেত, বাগান বা পুকুরে সার, বীজ বা মাছের খাবার ছিটানো ও কীটনাশক স্প্রেসহ বিভিন্ন কাজ করা যায়। নতুন উদ্ভাবন দেখতে প্রতিদিন তার বাড়িতে অসংখ্য মানুষ ভিড় করছেন। এরআগে একটি বিমান তৈরি করে আকাশে উড়িয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি করেছিলেন সবুজ।

সবুজ সরদারের বাড়ি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ৭ নম্বর শিবনগর ইউনিয়নের পলি শিবনগর গ্রামে। তার বাবা একরামুল সরদার পেশায় একজন ভ্যানচালক।

রিমোটের সাহায্যে এবং জিপিএসের মাধ্যমে দূর থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় সবুজের তৈরি ড্রোনটি। তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘কিষানি ড্রোন’। ড্রোনটি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা।

সবুজ সরদার ফুলবাড়ী কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পাস করেন। পরে দিনাজপুর উত্তরণ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু অর্থের অভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি সবুজ। গ্রামের মোড়ে একটি দোকানে মোবাইলের মেকানিকের কাজ শুরু করেন। এর পরপরই তার উদ্ভাবনের নেশা চেপে বসে।

মাত্র ৪৫ দিনের চেষ্টায় একটি চালকবিহীন ছোট বিমান তৈরি করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন সবজু সরদার। তিনি এটি আকাশে ওড়াতে সক্ষম হন।

গত ইরি-বোরো মৌসুমে ক্ষেতে কীটনাশক ছিটাতে গিয়ে এক কৃষিশ্রমিক অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তার এ অবস্থা দেখে সবুজের মাথায় আসে কীভাবে কৃষিজমিতে ঝুঁকিবিহীন কীটনাশক স্প্রে করা যায়।

সেই চিন্তা থেকে শুরু হয় তার দ্বিতীয় প্রজেক্টের কাজ। তিন মাসের প্রচেষ্টায় সফল হন সবুজ। তৈরি করে ফেলেন ড্রোন। যে ড্রোন দিয়ে ধানক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করা সম্ভব। তার উদ্ভাবিত ড্রোনটি রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যমে অনায়াসে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। একই সঙ্গে এটাতে সংযোগ করা হয়েছে জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম)। এতে যে কোনো জায়গায় বসে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

উপজেলার পলি শিবনগর গিয়ে দেখা যায়, চালকহীন একটি ড্রোন ফসলের মাঠে স্প্রে করছে। তা দেখতে ভিড় জমিয়েছেন এলাকার মানুষ।

স্থানীয় কু’বা জামে মসজিদের মোতোয়াল্লি মহসিন আলী সরদার বলেন, ‘সবুজ পাঠকপাড়া বাজারে মোবাইল মেকানিকের কাজ করেন। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ছেলেটির মেধা আছে। তার বিমান ও ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করার ড্রোন তৈরির খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। তার ড্রোন দিয়ে আমি আমার ধানক্ষেতে সার-কীটনাশক স্প্রে করেছি।’

সবুজের বাবা একরামুল সরদার জানান, সরকারি সহায়তা পেলে ছেলেটা আরও ভালো কিছু করতে পারত। সবুজের এলাকার ইউপি সদস্য মো. শাহিন সরদার বলেন, সবুজের এই আবিষ্কার যদি সরকারিভাবে কাজে লাগানো যেত, তা হলে দেশের কৃষকের উপকার হতো।

নিজের উদ্ভাবন সম্পর্কে সবুজ সরদার বলেন, ‘আমার তৈরি ড্রোনটির ধারণক্ষমতা দুই লিটার। একবার চার্জ করলে ৩০ মিনিট উড়তে পারে। এটি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। আরও ৪০-৫০ হাজার টাকা যোগ করলে ২০-২৫ লিটার তরল পদার্থ নিয়ে উড়তে এবং স্প্রে করতে পারবে ড্রোনটি। চলবেও কয়েক ঘণ্টা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার এ ড্রোন দিয়ে ঘণ্টায় ১০ একর জমিতে কীটনাশক স্প্রে করা সম্ভব। শুধু কৃষিকাজ নয়, এই ড্রোনের মাধ্যমে পুকুর বা জলাশয়ে মাছের খাবারও ছিটানো যাবে। স্প্রে করা যাবে আম, লিচুসহ যে কোনো ফলমূলের বাগান ও সবজি ক্ষেতে।’

পড়ালেখার বিষয়ে জানতে চাইলে সবুজ সরদার বলেন, অর্থের অভাবে বেসরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে পড়তে পারেননি। তার এক বছর নষ্ট হয়ে গেছে। আগামীতে ফুলবাড়ী উপজেলার যে কোনো একটি কলেজে ভর্তি হয়ে ফের পড়ালেখা শুরু করবেন। তার পাশে কোনো কোম্পানি বা সরকার এগিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা সবুজের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *