ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ৪,৬৫২ জন স্বল্প পূজির বিনিয়োগকারীকে ১৩৯.৬ কোটি টাকা ফেরৎ দিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব গ্রহণের পর গত দুই বছরে প্রতিষ্ঠানটির ৪,৬৫২ জন স্বল্প পূজির বিনিয়োগকারীকে প্রায় ১৩৯.৬ কোটি টাকা ফেরৎ দিয়েছে। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ঋণগ্রহিতাদের কাছ থেকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার বকেয়া আদায় করেছে। এই অর্থ থেকেই দায় মেটানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উচ্চ আদালত থেকে নিযুক্ত আইএলএফএসএল পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান।

বৃহস্পতিবার আইএলএফএসএল’র পুরানা পল্টনের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য দেন।

এরআগে একইস্থানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির ২৬তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন আইএলএফএসএল পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান। সভায় উপস্থিত ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো: মশিউর রহমান, স্বতন্ত্র পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ (অবঃ) মো. সফিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: মেফতাউল করিম (অবঃ), ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আশরাফ আলী এবং মো: এনামুল হাসান।

২০১৫-২০১৯ সময়ের মধ্যে আর্থিক কেলেঙ্কারীর কারণে ক্ষতি হওয়ার পরে প্রতিষ্ঠানটি পুনরুদ্ধার এবং পুনর্গঠনের পথে রয়েছে। “গ্রো উইথ কাস্টমার” অর্থাৎ ‘গ্রাহকের সাথে বেড়ে উঠো’ এই স্লোগান নিয়ে দেশের অন্যতম অ-ব্যাংকিং আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আইএলএফএসএল ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করেছিল; ২০১৫ সালের পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত কোম্পানীটি পন্যের বৈচিত্র্যময়তা ও পেশাদারিত্বের জন্য দেশের অন্যতম সেরা আর্থিক পরিষেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান বার্ষিক কর্মকান্ড উপস্থাপনের সময় বলেন, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সামগ্রিক ব্যয় ২১ শতাংশ কমেছে, সুদের আয় প্রায় একই পর্যায়ে ছিল, তবে তা বাড়বে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ৭০ শতাংশ সামগ্রিক ক্ষতি কমানো হয়েছে। সংস্থাটি পুনরূদ্ধার প্রক্রিয়া ও এর গতিশীলতা ত্বরান্বিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। ব্যালেন্সশীট পুনর্গঠন করার জন্য কাজও চলছে।

সংস্থাটি ইতোমধ্যে আমানত ও ঋণের দায়কে ইক্যুইটিতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট-এর সাথে ইস্যু ম্যানেজমেন্ট পরিষেবার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যার মাধ্যমে সামগ্রিক দায়ের সাথে অর্জিত সম্পদের পরিপূরক সহাবস্থান বজায় রেখে নগদ প্রবাহ সৃষ্টির পথকে মসৃণ করবে, তিনি বলেন।

মশিউর জানান, সংস্থাটির দীর্ঘমেয়াদী ক্রেডিট রেটিং ট্রিপল বি প্লাস)-এ উন্নীত হয়েছে এবং পুনর্গঠন কর্মসূচী বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী হয়েছে। জুন, ২০২০ সাল থেকে উচ্চ আদালত হতে নিযুক্ত স্বাধীন পর্ষদের নেতৃত্বের প্রতি অনুগত এবং তাঁদের প্রণীত নিয়ম ও প্রবিধান অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে ইতোমধ্যে ব্যবস্থাপনাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।

আইএলএফএসএল-এর একটি সাবসিডিয়ারী প্রতিষ্ঠান আইএল ক্যাপিটাল ২০২০ সালে ৭৫ লক্ষ টাকার নীট লোকসান থেকে চলতি বছর ২.৮৫ কোটি নীট মুনাফা অর্জন করে রেকর্ড করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ক্রমে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে এবং ২০২২ সালের জুনে আইএলএফএসএল-কে ৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করেছে। আরেকটি সাবসিডিয়ারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটিজ ২০২০ সালের নীট লোকসান ১৩৭ মিলিয়ন থেকে ২০২১ সালে ২৩ মিলিয়নে নামিয়ে এনে রেকর্ড করেছে। ঋণের দায়কে ইক্যুইটিতে রূপান্তরিত করে ব্যালেন্সশীট পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে, জানান তিনি।

তিনি বলেন, সংস্থাটির চারটি ঋণখেলাপী প্রতিষ্ঠান, যাদের প্রতিষ্ঠিত কারখানা এবং লাভজনক প্রকল্প ছিল কিন্তু তাদের পরিচালনা পর্ষদ পলাতক এবং নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে ওই খেলাপী প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হবার উপক্রম। এ অবস্থায় আইএলএফএসএল একটি সৃজনশীল উদ্যোগ নিয়েছে; হাইকোর্টে তিনটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের আবেদন করা হয়েছে। এই চারটি ঋণখেলাপী প্রতিষ্ঠানের নিকট আইএলএফএসএল-এর বকেয়া প্রায় ২৬০ কোটি টাকা কিন্তু তাদের বন্ধকী সম্পত্তির তাৎক্ষনিক বিক্রয় মূল্য মাত্র ৩৬ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে হাইকোর্ট রেপ্টাইলস ফার্ম এবং আনান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছেন। পরিবর্তিত নতুন পর্ষদ আইএলএফএসএল-এর ঋণ পরিশোধ করে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার লক্ষ্যে তাদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *