৭মবারের মত এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত

একেবারে শেষ বলে এসে আবারও স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে গেলো বাংলাদেশের। ২০০৯ তিনজাতি টুর্নামেন্ট, ২০১২ এশিয়া কাপ, ২০১৮ তিনজাতি সিরিজ কিংবা নিদাহাস ট্রফির সঙ্গে আরও একটি আফসোস হিসেবে যুক্ত হয়ে গেলো ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ। আরও একবার একেবারে তীরে এসে যে তরি ডুবলো বাংলাদেশের!

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের ফাইনালে একেবারে শেষ বলে এসে এবার আবারও ভারতের কাছে হেরে যেতে হলো ৩ উইকেটের ব্যবধানে। প্রথমবারেরমত এশিয়া কাপ জেতা হলো না বাংলাদেশের। পক্ষান্তরে, ৭মবারের মত এশিয়া কাপের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে নিলো ভারত।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে লিটন দাস আর মেহেদী মিরাজের অসাধারণ সূচনা এবং ১২০ রানের ওপেনিং জুটির পর বাংলাদেশকে অলআউট হতে হলো মাত্র ২২২ রানে। অথচ, সূচনার ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে অন্তত ২৫০ থেকে ২৬০ রান অনায়াসে হয়ে যেতো। কিন্তু সেটা করতে না পারায় ভারতীয় ব্যাটিংকে বোলাররা চেপে ধরলেও শেষ পর্যন্ত জয়টা আর ছিনিয়ে আনতে পারেনি কেবল পুঁজি কম থাকার কারণে। ২২৩ রানের লক্ষ্য পার হওয়ার জন্য ইনিংসের একেবারে শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। শেষ ওভারের থ্রিলারে অবশেষে জয় ছিনিয়ে নেয় তারা।

জয়ের জন্য শেষ তিন ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। ৪৮তম ওভার করলেন রুবেল হোসেন। তিনি দিলেন মাত্র ৪ রান। ফিরিয়ে দিলেন রবীন্দ্র জাদেজাকে। ম্যাচে যেন ফিরে আসে বাংলাদেশ। চেপে ধরে ভারতকে।

৪৯তম ওভার করলেন মোস্তাফিজুর রহমান। দিলেন মাত্র ৩ রান। উইকেট নিলেন একটি। শেষ ওভারে প্রয়োজন ৬ রান। বোলিং কে করবেন? কোনো পেসার বাকি নেই আর। স্পিনার মিরাজ আর মাহমুদউল্লাহর ওভার বাকি। বল তুলে দেয়া হলো সৌম্য সরকারের হাতে। পরে সিদ্ধান্ত বদলে দেয়া হলো মাহমুদউল্লাহর হাতে। বিপিএলে এমন পরিস্থিতিতে দলকে জেতানোর সামর্থ্য আছে তার।

প্রথম বলে মাহমুদউল্লাহর কাছ থেকে ১ রান নিলেন কুলদ্বীপ যাদব। পরের বলে কেদার যাদব নিলেন ১ রান। তৃতীয় বলে নিলেন ২ রান। ৩ বলে প্রয়োজন ২ রান। চতুর্থ বলে কোনো রান দিলেন না রিয়াদ। ২ বলে প্রয়োজন ২ রান। ৫ম বলে নিলেন সিঙ্গেল। দু’দলের ইনিংস হয়ে গেলো সমান। ১ বলে প্রয়োজন ১ রান। এবার কেদার যাদব লেগ স্ট্যাম্পের ওপর বল পেয়েই ঠেলে দিয়ে নিয়ে নিলেন ১ রান। ৩ উইকেটে জিতে গেলো ভারত। তীরে এসে আবারও তরি ডুবলো বাংলাদেশের।

টান টান উত্তেজনায় ভরপুর ম্যাচ। ২২২ রান করেও যে বাংলাদেশ এতটা লড়াই করবে, সেটা কারোরই ধারণায় ছিল না। অথচ মাশরাফি, মোস্তাফিজ, মিরাজ আর মাহমুদউল্লাহরা যেভাবে লড়াই করলেন, সেটা রীতিমত বিস্মকর। শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা,
দিনেশ কার্তিক, মহেন্দ্র সিং ধোনি কিংবা রবীন্দ্র জাদেজারা আউট হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত কেদার যাদব রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে টিকে ছিলেন।

শেষ মুহূর্তে মাঠে নেমে সেই যাদবই জিতিয়ে দিলেন ভারতকে। একেবারে শেষ বলে এসে সিঙ্গেল রান নিয়ে ভারতকে তিনি এনে দিলেন ৩ রানের জয়। ৭মবারের মত এশিয়া কাপ জিতলো ভারত।

মাত্র ২২৩ রানের লক্ষ্য। এশিয়া কাপের ৭ম শিরোপা ঘরে তোলার জন্য ভারতের সামনে বেশ সহজ লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পাড়ি দিতে গিয়ে উড়ন্ত সূচনাই করেছে ভারতীয়রা। রোহিত শর্মা আর শিখর ধাওয়ান মিলে শুরু থেকেই ছিলেন মারমুখি। ৪.৪ ওভারেই দু’জনের ওপেনিং জুটিতে উঠে যায় ৩৫ রান।

কিন্তু ৫ম ওভারের ৪র্থ বলে এসে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন নাজমুল ইসলাম অপু। মাত্রই দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলছেন বাংলাদেশের এই স্পিনার। তার করা আউটসাইড অফের বলটি খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন ধাওয়ান। মিড অফে সেটি তালুবন্দী করে নেন সৌম্য সরকার। ১৪ বলে ১৫ রান করে ফিরে যান ধাওয়ান। নাগিন ড্যান্স দিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন অপু।

অষ্টম ওভারেই আম্বাতি রাইডুকে ফিরিয়ে দেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ওভারের তিন নম্বর বলটিকে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন রাইডু। কিন্তু ব্যাটে বলে করতে পারেননি ঠিক মত। বল ব্যাটের কানায় লেগে জমা পড়ে গিয়ে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে। ২ রান করে আউট হয়ে যান রাইডু।

বাংলাদেশের বিপক্ষে সব সময়ই রোহিত শর্মার ব্যাট থাকে যেন খোলা তরবারি। সেই তরবারির আঘাতে বারবার তিনি ম্যাচ জেতান ভারতকে। এবারও রোহিত শর্মা সেই একই পথে হাঁটতে শুরু করেছিলেন। চলতি এশিয়া কাপে এমনিতেই রোহিত শর্মা ছিলে দুর্দান্ত ফর্মে। পাকিস্তানের বিপক্ষে করেছিলেন দারুণ এক সেঞ্চুরি।

বাংলাদেশের ২২২ রানের চ্যালেঞ্জ টপকাতে গিয়ে রোহিত শর্মা খেলে ফেলেছিলেন ৪৮ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস। তার ব্যাট যখন ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল, তখনই রুবেল হোসেন আঘাত হানেন তার ওপর। ১৭তম ওভারে রুবেলের চতুর্থ বল ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে নাজমুল ইসলাম অপুর হাতে ধরা পড়েন তিনি।

রোহিত আউট হয়ে যাওয়ার পর দিনেশ কার্তিককে নিয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। ৫৪ রানের জুটি গড়ে তোলেন। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বলে ফাঁদে পড়েন দিনেশ। ৩৭ রানের মাথায় লেগ বিফোর উইকেট হয়ে ফিরে যান তিনি।

কেদার যাদব এবং রোহিত শর্মা আউট হলেও মহেন্দ্র সিং ধোনি টিকে থাকা মানেই বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচটা কেড়ে নেয়া। ধোনি টিকে থেকে ধীরে ধীরে ম্যাচটাকে বাংলাদেশের বলয় থেকে বের করে নিচ্ছিলেন। অবশেষে সেই ধোনিকে ফিরিয়ে দিলেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান।

দুর্দান্ত এক কাটারে পরাস্ত করেন ধোনিকে। তার অফ কাটারের বলটিকে কাভার ড্রাইভ করতে গিয়েছিলেন ধোনি। শেষ পর্যন্ত ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বলটা চলে যায় উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহীমের হাতে। ৬৭ বলে ৩৬ রান করেন তিনি।

দিনেশ কার্তিক আউট হওয়ার পর মাঠে নেমেছিলেন কেদার যাদব। তবে মাঝপথে পায়ে ব্যাথা পেয়ে তিনি মাঠ ছেড়ে যান। এরপর মাঠে নামেন রবীন্দ্র জাদেজা। ভুবনেশ্বর কুমার আর জাদেজা মিলে দারুণ মাঝারিমানের একটা জুটি গড়ে তোলেন। ৪৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রুবেলের বলে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেন রবীন্দ্র জাদেজা। আম্পায়ার আঙ্গুল না তুললে মুশফিক রিভিউ নিলেন এবং রিভিউতে দেখা গেলো জাদেজা আউট।

এরপরের ওভারে বোলিং করতে এসে দারুণ এক অফ কাটারে ভুবনেশ্বর কুমারের উইকেট তুলে নিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। ৩১ বলে ২১ রান করে আউট হয়ে যান ভুবনেশ্বর। ম্যাচটাও হেলে যায় বাংলাদেশের দিকে। কিন্ত শেষ পর্যন্ত সেই কেদার যাদব আর কুলদ্বীপ যাদব মিলে জিতিয়ে দিলেন ভারতকে।

দুই পেসার রুবেল হোসেন এবং মোস্তাফিজুর রহমান নেন ২টি করে উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন নাজমুল ইসলাম অপু, মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে লিটন কুমার দাসের ১২১ রানের অনবদ্য ইনিংসের ওপর ভর করে ২২২ রানের সংগ্রহ গড়ে তোলে বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *