সবজি ও মাংসের দাম বেড়েছে

বেশিরভাগ সবজির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকার ওপরে। দেড়’শ টাকার নিচে মিলছে না কোনো মাছের কেজি। বয়লার মুরগির কেজি ১৬০ টাকার ওপরে। হঠাৎ করেই রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজি, মাছ ও মাংসের দাম এমন গরম হয়ে ওঠেছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজি, মাছ ও মাংসের পাশাপাশি কাঁচামরিচ, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। আর কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে এক পোয়ায় (২৫০ গ্রাম) ৫ টাকা।

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, সেগুনবাগিচা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বাজারে এখন সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে নতুন আসা বরবটি। বাজার মানভেদে বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। দামের দিক থেকে এর পরেই রয়েছে পটল ও করলা। বাজারভেদে পটল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে করলা।

বরবটির মতো বাজারে পটল নতুন আসলেও দীর্ঘদিন ধরে করলা পাওয়া যাচ্ছে। গত দুই মাস ধরে বেশিরভাগ সবজির দাম ছিল সস্তা, কিন্তু করলার দাম ছিল চড়াই। এখন চড়া দামের বাজারে নতুন করে করলার দাম আরও বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে করলার দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা।

বরবটি, পটল, করলার মতো স্বস্তি মিলছে না ঢেঁড়স, কচুর লতি, লাউ, শসা, শিম, ধুন্দুলের দামেও। গত সপ্তাহে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঢেঁড়সের দাম বেড়ে হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি।

সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বাড়ার তালিকায় থাকা শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শিমের দাম বেড়ে হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি।

চড়া দামের এমন বাজারে তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে পেঁপে, বেগুন, পাকা টমেটো ও গাজর। পেঁপে আগের মতোই ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২০ টাকা কেজির মধ্যে। পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। আর গাজর পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি। দাম অপরিবর্তিত থাকার তালিকায় রয়েছে গোল আলু। আগের মতোই আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।

সবজির দামের বিষয়ে কাওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী রিয়াজ হোসেন বলেন, শীতের সবজি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এখন যে ফুলকপি, পাতাকপি পাওয়া যাচ্ছে, এর প্রতি ক্রেতাদের খুব একটা আগ্রহ নেই। বাজারে এখন নতুন করে এসেছে পটল, ঢেঁড়স, বরবটি। নতুন আসায় এসব সবজির দাম এখন বাড়তি। তাছাড়া কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণেও সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে।

খিলগাঁওয়ের সবজি ব্যবসায়ী ফারুক বলেন, এক সপ্তাহ ধরে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বাড়ছে। ৮০ টাকা কেজির নিচে এখন ভালো মানের কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টির কারণে চাষীদের অনেক সবজির খেত নষ্ট হয়ে গেছে, যে কারণে সবজির দাম হঠাৎ করেই এমন বেড়েছে। তাছাড়া শিম, ফুলকপি, পাতাকপি সরবরাহ দিন দিন কমে আসছে।

এদিকে বেশ কিছুদিন স্বস্তি দেয়া পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করেই বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। বাজারভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি। তবে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ আগের মতোই ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ১৫ থেকে ২০ টাকা পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচের দাম বেড়ে ২০ থেকে ৩০ টাকা হয়েছে।

সবজি, পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচার মতো ক্রেতাদের স্বস্তি দিচ্ছে না মাছ ও মাংসের দাম। কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকা বয়লার মুরগির দাম নতুন করে আরও বেড়েছে। বাজার ভেদে বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা।

বয়লার মুরগির পাশাপাশি দাম বেড়েছে লাল লেয়ার মুরগি। লাল লেয়ার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৯৫ থেকে ২০৫ টাকা। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে পাকিস্তানি কক মুরগির দাম, আগের সপ্তাহের মতোই এ মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা।

সপ্তাহের ব্যবধানে গরু ও খাসির মাংসের দাম না বাড়লেও, এখন কোনো বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৫০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু কিছু বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫২০ টাকা কেজি। খাসির মাংস আগের সপ্তাহের মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি।

হাজীপাড়া বউ বাজার থেকে মুরগি কিনতে আসা ফাতেমা খাতুন বলেন, আমাদের মতো গরিব মানুষরা অনেক আগেই গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। এখন আমাদের কাছে মাংস খাওয়া মানে বয়লার মুরগি খাওয়া। সাধারণত শুক্রবারে মাংস খাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু এখন অবস্থা যা দেখছি সামনে হয়ত বয়লার মুরগির মাংস খাওয়া হবে না। প্রতিদিন বয়লার মুরগির দাম বাড়ছে।

তিনি বলেন, শুধু মুরগি না এখন সব ধরনের মাছ ও সবজির দাম অনেক বেশি। এভাবে দাম বাড়লে আমাদের মতো গরিব মানুষের জীবন চালানো কষ্টকর হয়ে যাবে। কিন্তু যাদের টাকা আছে তাদের কোনো সমস্যা নেই। আমরা কম দামে কেনার জন্য এ দোকান, সে দোকান ঘুরি। আর যাদের টাকা আছে তারা দাম না করেই প্যাকেট ভরে কিনে নিয়ে যায়।

মুরগির দামের বিষয়ে মালিবাগের ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই সব ধরনের মুরগির দাম বাড়ছে। জানুয়ারিতে যে বয়লার মুরগি ১২৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছি, গত সপ্তাহে তা ১৫৫ টাকায় বিক্রি হয়। আর এখন বয়লার মুরগি ১৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করছি। এভাবে সব ধরনের মুরগির দাম বেড়েছে। ফার্ম থেকে মুরগির সরবরাহ কম থাকায় এমন দাম বাড়ছে।

মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব থেকে কম দামে বিক্রি হচ্ছে তেলাপিয়া। আগের সপ্তাহের মতো তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি, পাঙাশ ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, চিতল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মাছের দামের বিষয়ে যাত্রাবাড়ী আড়তের ব্যবসায়ী একরামুল বলেন, মাছের দাম অনেকটাই নির্ভর করে আড়তে সরবরাহের উপর। মাছের উৎপাদন কম হওয়ায় কয়েক মাস ধরে তুলনামূলক মাছ কম আসছে। যে কারণে সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি।

যাত্রাবাড়ী বাজারে মাছ কিনতে আসা শরিফুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় আজ সব ধরনের মাছের দাম বেশি। গত সপ্তাহে যে রুই মাছ ২৬০ টাকা কেজি কিনেছি আজ তা ৩৫০ টাকা কেজি চাচ্ছে। টেংরা মাছ গত সপ্তাহে সাড়ে ৫০০ টাকা কেজি কিনেছিলাম, আজ ৭০০ টাকা কেজি চাচ্ছে।

তিনি বলেন, মাছের মতো সব ধরনের সবজির দামও এমন চড়া। হঠাৎ করে কী এমন হলো যে সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে। আসলে বাজারে মনিটরিং করার কেউ নেই। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ালে কেউ কিছু বলে না। যে কারণে হুটহাট করে যেকোনো অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *