শ্রমিক সংকটে বিলীন বাম্পার ফলনের আনন্দ

স্টাফ রিপোর্টার

রাজশাহী অঞ্চলে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা ও মাড়াই। জেলায় এবার ঝড়-ঝাপটা তেমন না থাকায় ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আর ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি চাষিরা। তবে শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ায় বাম্পার ফলনের আনন্দ বিলীন হচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থ দিয়েও মিলছে না শ্রমিক।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এবার বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৬৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি। তবে তা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৬৮ হাজার ৬০০ হেক্টর। শুধু তাই নয়, জেলার সব উপজেলায় এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই ধান পেকে সোনালী রঙে শোভা ছড়িয়ে দুলছে জমিতে। এতে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে নতুন ধান ঘরে তুলতে মাঠে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহীতে এবার শুরুতে বোরো ধান রোপণে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে দামও ভালো থাকায় ব্যাপক খুশি তারা। তবে বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান লাগানো থেকে কাটা-মাড়াইয়ের বেশিরভাগ শ্রমিকই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর। গত কয়েকবছর ধরে তারা শহরে গিয়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। ফলে গ্রামে ধান কাটার শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে।

দুর্গাপুর উপজেলার সবুর আলী বলেন, এবার পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। জমিতে ভালোই ধান হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যেই ধান কাটা শুরু করবো। কিন্তু শ্রমিক পাচ্ছি না। জনপ্রতি শ্রমিক মজুরি চাচ্ছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা।

তিনি বলেন, প্রতিবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্রমিকরা দলে দলে এসে রাজশাহীতে ধান কাটেন। এবার এখন পর্যন্ত তারাও আসেননি। ফলে অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিয়েও ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ভালো ফলন হয়েছে। এখন বোরো ধান কাটার মৌসুম। কিন্তু শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় যারা আছেন তারা পারিশ্রমিক হাঁকাচ্ছেন বেশি। আগে ছয়-সাতজন শ্রমিক এক বিঘা ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করে দিলে প্রায় আড়াই মণ ধান দিতে হতো। এবার শ্রমিকেরা সাড়ে চার মণ চাচ্ছেন। তাও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ধানের বদলে টাকা দিলে একজন শ্রমিককে এখন এক বেলার জন্যই দিতে হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকা। গতবছর শ্রমিকের পারিশ্রমিক কম ছিল।

তিনি আরও বলেন, ঈদের আগের তাপদাহের কারণে জমিতে বেশি পরিমাণ সেচ দিতে হয়েছে। এতে আগেও অনেক খরচ হয়ে গেছে। জেলার বেশকিছু এলাকায় শিলা বৃষ্টিতে ধানের ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আনন্দ শ্রমিক সংকটের কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

গোদাগাড়ী উপজেলার মনিরুল, শফিকুল, মিলনসহ কয়েকজন কৃষক জানান, সময়মতো সেচের পানি পাওয়ায় ও আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছে। আবহাওয়া এরকম থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

পবা উপজেলার কৃষক আব্দুল গফুর বলেন, এবার ব্রি-২৮ ও জিরাশাইল জাতের ধান আবাদ করতে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে সাত থেকে আট হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি ধানের ফলন ২০-২২ মণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ধানের যে দাম তাতে তেমন লাভ হবে না। এছাড়া শেষ পর্যন্ত শ্রমিক পাওয়া না গেলে ক্ষতি হয়ে যাবে।

দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত বছরও আমন ধানের দাম ১৩০০ টাকা মণ পেয়েছি। এবার ধান আবাদে খরচ বেশি হলেও দাম ১২০০ টাকা মণ চলছে। এই দামে আমাদের চলবে না। এছাড়া শ্রমিক সংকটের কারণেও অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহী জেলায় এবার বোরো ধান আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা ছাড়িয়ে গেছে। ধানের ফলনও বেশ ভালোই হচ্ছে। এরইমধ্যে রাজশাহী জেলায় বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে।

তিনি বলেন, ধান কাটার আগ মুহূর্তে জমিতে সেচ দিতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে জমিতে পানি বেশি লেগেছে। ডিপটিউবওয়েলগুলোতে পানি কম ওঠায় কৃষকরা সমস্যায় পড়েছেন। তবে ধানের ফলন বেশ ভালোই হয়েছে। আশা করা যায়, কৃষকরা যথাসময়ে তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারবে।

তিনি বলেন, কেবল ধান কাটা শুরু হয়েছে। এখনই শ্রমিক সংকট বলা যাবে না। কারণ, রাজশাহীর ধান কাটেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্রমিকরা। তারা এখনও আসেননি। এক বিঘা ধান কেটে তো তারা বসে থাকবেন না। সব জমির ধান পাকলে ওই শ্রমিকরা আসবেন। তখন সংকট বোঝা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *