শিল্পে দক্ষ কর্মীর অভাব অন্যদিকে বেকার: ডিসিসিআইর সেমিনারে বক্তারা
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে শিল্প খাতের দ্রুত বিকাশ ঘটছে। শিল্পে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এসব প্রযুক্তি পরিচালনা কিংবা এর সঙ্গে সমন্বয় করার মতো দক্ষ কর্মীর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ফলে শিক্ষাজীবন শেষ করে অনেক তরুণ বেকার থাকলেও উদ্যোক্তারা পাচ্ছেন না দক্ষ কর্মী। তাই দক্ষ জনবল তৈরিতে শিল্পের সঙ্গে শিক্ষা কারিকুলামের নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন শেষ করে সহজে চাকরির জন্য নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারেন।
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘শিল্প-শিক্ষা খাতের সমন্বয় : পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এমন মত দেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষা ও শিল্প খাতের সমন্বয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। এখন সময় এসেছে একে বাস্তবে রূপ দেওয়ার। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ জরুরি। তবে শিক্ষা ও শিল্প খাতের মধ্যে কিছুটা আস্থার ঘাটতি রয়েছে। এর নিরসন দরকার।
সবাই ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, পড়ালেখা শেষ করার পর কেউ কৃষক হতে চায় না। অথচ কৃষি এখন ‘স্মার্ট’ হচ্ছে। কৃষিতে যুক্ত হয়েছে নতুন সব প্রযুক্তি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এসে গেছে। শিক্ষার্থীদের এমনভাবে প্রস্তুত হতে হবে, যাতে যে কোনো পরিস্থিতিতে চাকরি ক্ষেত্রে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া যায়।
তিনি বলেন, সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বেশকিছু হাই-টেক আইটি পার্ক স্থাপন করছে। তবে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ বাড়াতে স্থানীয়ভাবে দক্ষ মানবসম্পদের বিকল্প নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ সম্পর্কিত গবেষণা বাড়াতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি মো. সামীর সাত্তার বলেন, শিল্প খাত পরিচালনায় অনেক বিদেশি কর্মী কাজ করছেন। যাদের পেছনে বেতন-ভাতা হিসাবে বছরে ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। এ জন্য দায়ী গুণগত শিক্ষাব্যবস্থার অনুপস্থিতি ও দক্ষ জনশক্তির অভাব। তাই দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষা ও শিল্প খাতের মধ্যে সংযোগ জরুরি।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে শিল্পের সঙ্গে শিক্ষার সংযোগের অভাব অত্যন্ত প্রকট। ফলে তরুণ জনগোষ্ঠীকে শিল্প খাতের জন্য দক্ষ করে গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এর প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। তিনি বাজেটে শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি একটি ন্যাশনাল এমপ্লয়মেন্ট ডাটাবেজ প্রণয়নের জন্য দাবি জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ বলেন, এরই মধ্যে এনএসডিএতে ১৪টি পরিষদ গঠন করা হয়েছে, যেখান থেকে সমসাময়িক বিষয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়েমা হক বিদিশা। তিনি বলেন, ক্রমাগত পরিবর্তনশীল এ বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে। এটি মোকাবিলায় শিক্ষা ও শিল্প খাতে প্রয়োজনীয় সমন্বয় দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ‘অ্যানালিটিক্যাল থিংকিং,’ ‘ক্রিয়েটিভিটি থিংকিং’ এবং ‘এআই ও বিগ ডাটা অ্যানালাইসিস’ খাতে সবচেয়ে বেশি দক্ষ জনবলের চাহিদা তৈরি হবে।
মুক্ত আলোচনায় আইএলও বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি টমো পুটিনেন বলেন, দক্ষ কর্মী তৈরির জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ থাকতে হবে। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, দেশে অভাব থাকায় বিদেশ থেকে দক্ষ জনবল আনতে হচ্ছে। বেশিরভাগ চাকরিপ্রার্থী বিসিএস, মানবসম্পদ বিভাগ ও মার্কেটিংয়ে চাকরি চায়। এ প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসা দরকার।
এ ছাড়া বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সত্যপ্রসাদ মজুমদার, ইউজিসি সদস্য ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন।