রিটার্ন জমা দেননি প্রায় অর্ধকোটি টিআইএনধারী
বিদায়ী ২০২৩-২৪ করবর্ষে রিটার্ন জমা পড়েছে ৩৬ লাখ ৬২ হাজার, যা এর আগের ২০২২-২৩ করবর্ষে ছিল ৩০ লাখ ২৮ হাজার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে রিটার্ন জমা বেড়েছে প্রায় ৬ লাখ। পাশাপাশি রিটার্নের সঙ্গে আয়কর আদায় বেড়েছে প্রায় ৯০১ কোটি টাকা। আর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ই-টিআইএন নিবন্ধন দাঁড়িয়েছে ৯৯ লাখ ৬৯ হাজার ৫১৫।
ট্যাক্স আইডেন্টিটি ফিকেশন নাম্বার বা টিআইএন রয়েছে তাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। তবে রিটার্ন দাখিল করলেই যে আয়কর দিতে হবে তা নয়। কারও আয় যদি করযোগ্য না থাকে তাহলে কর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু রিটার্ন জমা দিলেই হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই পাঁচ মাস জরিমানা ছাড়া বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যায়। ৩০ নভেম্বর দেশে আয়কর দিবস হিসেবে পালিত হয়। এদিনই ব্যক্তি করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমার শেষ তারিখ। তবে করদাতাদের সুবিধার্থে প্রতি বছরই সাধারণত এই সময় বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। এবার রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ৩১ জানুয়ারি ২০২৪।
সময়সীমা পার হওয়ার পর যেভাবে রিটার্ন দাখিল
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৬ লাখ ৬২ হাজার করদাতা রিটার্ন জমা দিয়েছেন। অন্যদিকে এনবিআরের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যক্তি ও কোম্পানি করদাতার পরিমাণ ৯৮ লাখ ৩৪ হাজার ৬১৫। সে হিসাবে এখনো প্রায় ৬৫ লাখ করদাতা রিটার্ন জমা দেননি।
এই করদাতাদের সম্পর্কে জানতে চাইলে এনবিআরের আয়কর অনুবিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কর দিবসের মধ্যে আয়কর রিটার্ন বা বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ হারে জরিমানা দিতে হবে।
জানা যায়, গত বছর আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ বাতিল হয়ে এ বছর থেকে আয়কর আইন ২০২৩ বাস্তবায়ন হয়েছে এবং এর ফলে ব্যক্তি করদাতার আয়কর গণনাসহ ট্যাক্স রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে বেশকিছু পরিবর্তন এসেছে। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি করদাতা যদি কর দিবসের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হতেন তাহলে মাসিক ২ শতাংশ সুদ দিতে হতো। এই সুদ বকেয়া করের ওপর গণনা করে রিটার্ন দাখিল করার সময় চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হত। তবে আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী, এ বছর থেকে ২ শতাংশের পরিবর্তে মাসিক ৪ শতাংশ সুদ দিতে হবে। কোনো মাসের ভগ্নাংশও এক মাস হিসেবে বিবেচিত হবে। যেমন কোনো করদাতা ৩১ জানুয়ারির মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে পারেননি। পরে তিনি ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। এক্ষেত্রে এক মাসের জন্য ৪ শতাংশ করে সুদ দিতে হবে।
কোনো করদাতা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে অন্তত ৬ ধরনের সুবিধা পাবে না। যার মধ্যে রয়েছে—কর অব্যাহতির সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন না অর্থাৎ তার যেকোনো ধরনের কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয় করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এছাড়া ওই করদাতা করমুক্ত আয়ের সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন না অর্থাৎ তার যেকোনো ধরনের করমুক্ত আয় করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচনা হবে। হ্রাসকৃত হারে কর প্রদানের সুবিধা প্রাপ্ত হবেন না।
এছাড়া ওই ব্যক্তি কোনো ধরনের বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত সুবিধা প্রাপ্ত হবেন না। এছাড়া আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা ১৭৪ ও ২৬৬ অনুযায়ী তাকে অতিরিক্ত ও নির্ধারিত হারে জরিমানা পরিশোধ করতে হবে। আইন অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি সময়মতো আয়কর রিটার্ন দিতে ব্যর্থ হন, এক্ষেত্রে অধ্যাদেশ অনুযায়ী এক হাজার টাকা অথবা আগের বছরের করের ১০ শতাংশ জরিমানা করা যাবে। এ দুটির ভেতরে যেটি পরিমাণে বেশি সেই অঙ্কটি জরিমানা হতে পারে। এছাড়া কয়েক বছর ধরে যদি কেউ রিটার্ন দাখিল না করেন তাহলে ওই জরিমানা ছাড়াও যতদিন ধরে তিনি রিটার্ন দেননি ওই পুরো সময়ের দিনপ্রতি ৫০ টাকা করে জরিমানা হতে পারে। পুরোনো করদাতা হলে আগের বছর যে পরিমাণ অর্থ আয়কর হয়েছে
সেটিসহ ওই অর্থের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি দিতে হতে পারে। যারা করযোগ্য হওয়ার পরও একেবারেই কর দেন না, তাদের ক্ষেত্রে তিন ধরনের জরিমানা করা হয়। একটি হলো যে পরিমাণ কর বকেয়া হয়েছে সেটি ছাড়া আরও ২৫ শতাংশ বাড়তি জরিমানা, যে পরিমাণ কর বকেয়া তার ওপর ২ শতাংশ হারে মাসিক সরল সুদ ও যে পরিমাণ কর বকেয়া হয়েছে তার সমপরিমাণ জরিমানা।
আরও জানা যায়, নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন জমা না দেওয়ায় জরিমানার বিধান ছাড়াও আয়কর রিটার্ন ঠিক সময়ে জমা না দিলে পরবর্তীতে কোনো ট্রেড লাইসেন্স করতে পারবেন না। উদাহরণসরূপ, কর না দেওয়া ব্যক্তির হঠাৎ বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন। তার ভিসা সহজে মিলবে না। কেননা অনেক দেশই ভিসা দিতে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখতে চায়। আয়কর জমা দেওয়ার সব তথ্যই ভিসার প্রয়োজনে সেখানে দাখিল করতে হয়।