বিশ্ব অর্থনীতিতে ট্রিলিয়ন ডলারের হুমকি
৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বহিরাগত জীব ও অণুজীবগুলো (ইনভেসিভ স্পেসিস) বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আকারে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আসছে। ফসল নষ্ট করা থেকে শুরু করে মানবস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করা ক্ষতিকর জীব ও অণুজীবগুলো গত অর্ধশতাব্দীতে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। এতে বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি ডলার। আগামীতে এ ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি প্রভাবশালী বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচারে প্রকাশিত একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর ব্লুমবার্গ।
বিদেশী প্রাণী, উদ্ভিদ কিংবা রোগজীবাণু নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে এ ধরনের ক্ষতি হয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্বায়নের ফলে এ ধরনের আক্রমণ আরো ঘন ও তীব্র হয়ে ওঠে।
গবেষণাটির প্রধান প্যারিস-স্যাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিস্টোফ ডায়াগন এক বিবৃতিতে বলেছেন, এ আক্রমণগুলো কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং প্রতি দশকে তিন গুণ হারে বাড়ছে। আক্রমণাত্মক প্রজাতির ক্ষয়ক্ষতি এত বেশি যে হিসাব অতিরঞ্জিত হচ্ছে কিনা, তা যাচাইয়ের পেছনে আমরা কয়েক মাস সময় দিয়েছি।
বর্ধিত বৈশ্বিক বাণিজ্য ও পরিবহন ব্যবস্থা জীবাণুগুলোকে বিশ্বজুড়ে ছড়ানোর আরো বেশি সুযোগ করে দিয়েছে। কৃষিজমি ও অবকাঠামো তৈরির জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি এ জীব ও অণুজীবকে প্রভাবিত করায় সমাজকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
একটি বিদেশী জীবাণু মানবজীবন ও অর্থনীতিতে ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে। বর্তমানে তা নিয়ে সম্ভবত অবাক হওয়ার কিছু নেই। এক্ষেত্রে একটি জীবন্ত প্রাণী থেকে মানুষে স্থানান্তরিত হওয়া এবং চীনের উহান থেকে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া কভিড-১৯ মহামারী বড় উদাহরণ। এখন পর্যন্ত ২৮ লাখেরও বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নেয়ার পাশাপাশি ভাইরাসটি লাখ লাখ কোটি ডলারের ক্ষতির কারণ হয়েছে। ভাইরাসটির বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে টিকাদান কার্যক্রম চললেও অনেক দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধি হওয়ায় নতুন করে লকডাউন জারি করা হচ্ছে। বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে সব ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম। কয়েক দশক ধরে এ ধরনের প্রাণঘাতী ভাইরাস ধ্বংসাত্মক প্রাদুর্ভাব ঘটাতে পারে বলে সতর্ক করে আসছিলেন জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
গবেষণায় বলা হয়েছে, এ সময়ে ক্ষয়ক্ষতি আফ্রিকার ৫০ দেশের ২০১৭ সালের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সামগ্রিক পরিমাণকেও ছাড়িয়ে গেছে। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সম্মিলিত মোট তহবিলের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। তবে অর্থনৈতিক ক্ষতির এ হিসাবের মধ্যে কভিড-১৯-এর মতো উদীয়মান রোগগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো গবেষক কোরি ব্র্যাডশোর মতে, আমরা দেখতে পেয়েছি প্রতি ছয় বছরে এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। এটা এমন একটি প্যাটার্ন, যা বিশ্বজুড়ে বহিরাগত জীব ও অণুজীবের সংখ্যার ক্রামগত বৃদ্ধিকে অনুকরণ করছে।
গবেষকরা বলেছেন, বৈশ্বিক প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় বহিরাগত জীব ও অণুজীবগুলো একটি প্রধান ফ্যাক্টর হওয়া উচিত।