ফাখরের ১৯৩ তবুও জিততে পারল না পাকিস্তান
সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে জেতা ম্যাচ হারার পর্যায়ে নিয়ে একদম শেষ বলে গিয়ে জিতেছিল পাকিস্তান ক্রিকেট দল। কিন্তু জোহানেসবার্গের ওয়ার্ডার্স স্টেডিয়ামে এতটা সুপ্রসন্ন হলো না পাকিস্তানিদের ভাগ্য। অন্যান্য ব্যাটসম্যানদের ভয়াবহ ব্যর্থতায় বিফলে গেছে ফাখর জামানের রেকর্ডগড়া ১৯৩ রানের ইনিংস।
একদিকে ওপরের সারির ব্যাটসম্যানদের সবার সম্মিলিত অবদানে ৩৪১ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্যদিকে দলের কারও কাছ থেকে ন্যুনতম সঙ্গটাও পাননি ফাখর। যে কারণে তিনি একা ১৯৩ রান করলেও ৩২৪ রানের বেশি হয়নি পাকিস্তানের রান। ফলে ম্যাচ হেরে গেছে ১৭ রানের ব্যবধানে, সিরিজে এসেছে সমতা।
দক্ষিণ আফ্রিকার চার ফিফটিতে করা ৩৪১ রানের বিশাল সংগ্রহের জবাবে শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে পাকিস্তান। স্রোতের বিপরীতে একাই লড়েন ফাখর। দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন বাবর আজম। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৫ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে।
তবু লড়াইয়ে ক্ষান্ত দেননি ফাখর। নিঃসঙ্গ যোদ্ধা হয়ে লড়েছেন একদম শেষপর্যন্ত। ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরিকে দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরিতে রুপ দেয়ার খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু থামতে হয়েছে অদ্ভুতুড়ে এক রানআউটের কারণে। যেখানে দায়টা তার নিজেরই বেশি।
ততক্ষণে বলা যায় পাকিস্তানের পরাজয় প্রায় নিশ্চিত। ইনিংসের ৪৯ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ৩১১ রান। অর্থাৎ শেষ ওভারে করতে হতো ৩১ রান। ম্যাচ জেতা প্রায় অসম্ভব হলেও, ফাখরের ডাবল সেঞ্চুরি ছিল দৃষ্টিসীমানায়। কেননা তিনি তখন ব্যাট করছিলেন ১৯২ রানে।
লুঙ্গি এনগিডির করা শেষ ওভারের প্রথম বলটি লংঅনের দিকে খেলে দিয়ে সহজেই প্রথম রান নেন ফাখর, দৌড় দেন দ্বিতীয় রানের জন্য। তখন চতুরতা দেখান প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক। তিনি এমন ভাব করেন যেন থ্রো করা হয়েছে বোলিং প্রান্তে। কিন্তু আসলে এইডেন মারক্রাম থো করেছিলেন স্ট্রাইকিং প্রান্তেই।
ডি ককের চতুরতায় পেছনে ঘুরে তাকান ফাখর। ততক্ষণে মারক্রামের সরাসরি থ্রো এসে ভেঙে দেয় স্ট্রাইক প্রান্তের স্ট্যাম্প। ফলে ১৯৩ রানে রানআউট হতে হয় ফাখরকে। দলের পরাজয়ের পাশাপাশি নিজের ডাবল সেঞ্চুরিটাও হাতছাড়া করেন ফাখর।
আউট হওয়ার আগে ১৮ চার ও ১০ ছয়ের মারে ১৫৫ বলে ১৯৩ রান করেন ফাখর। যা কি না ওয়ানডে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের বিশ্বরেকর্ড। ফাখর ভেঙেছেন ২০১১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে শেন ওয়াটসনের করা ১৮৫ রানের রেকর্ড। অবশ্য রেকর্ড ভাঙলেও ম্যাচ জেতাতে পারেননি ফাখর।
এর আগে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। আমন্ত্রি হয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই মারমুখি স্বাগতিকদের দুই ওপেনার। ৯.৩ ওভারে ৫৫ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন ওপেনাররা। ৩৪ বলে ৩৯ রান করে বিদায় নেন এইডেন মারক্রাম।
তবে কুইন্টন ডি কক আর অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা মিলে গড়ে তোলেন ১১৪ রানের বিশাল জুটি। ৮৬ বলে ৮০ রান করে আউট হন কুইন্টন ডি কক। ১০ বাউন্ডারির সঙ্গে একটি ছক্কার মার মারেন তিনি।
টেম্বা বাভুমা খেলেন ৯২ রানের ইনিংস। ১০২ বলে তিনি ইনিংসটি সাজান ৯টি বাউন্ডারিতে। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান রাশি ফন ডার ডুসেন খেলেন ৬০ রানের ইনিংস। তাও মাত্র ৩৭ বলে। ৬টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছক্কা মারেন ৪টি।
ডেভিড মিলারও ব্যাট হাতে ছিলেন বিধ্বংসী। ২৭ বলে তিনি খেলেন অপরাজিত ৫০ রানের ইনিংস। ৩টি করে চার এবং ছক্কার মার মারেন তিনি। হেনরিক্স ক্লাসেন করেন ১১ রান। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৪১ রান।
পাকিস্তানের হয়ে হারিস রউফ নেন ৩ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ হাসনাইন এবং ফাহিম আশরাফ।