ইতিহাসের পাতায় মিরাজ-মুশফিক

তাদের জুটিটা আরও বড় হতে পারতো। ইনিংসের তখনও বাকি ছিলো ৯টি বল। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের ডাকে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগে মেহেদি হাসান মিরাজের। যার ফলে আর খেলতে পারেননি ইনিংসের বাকি সময়টা। তবু চলতি বিপিএলের সর্বোচ্চ রানের জুটিটা ঠিকই হয়েছে মিরাজ ও মুশফিকের মাঝে।

ইনিংসের চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে সাব্বির রহমানের দারুণ এক ক্যাচে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরে যান রাইলি রুশো। এর আগে প্রথম ওভারেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছিলেন ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। যার ফলে পাওয়ার প্লে’র মধ্যেই উইকেটে আসতে হয় অধিনায়ক মুশফিককে। সঙ্গী হিসেবে পান চলতি বিপিএলের চমক হিসেবে আবির্ভূত হওয়া ওপেনার মেহেদি মিরাজকে।

দুজনের মাঝে বোঝাপড়া যে কত ভাল, সে প্রমাণ আগেও অনেকবার পেয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে লোয়ার অর্ডারে মিরাজের সঙ্গে মুশফিকের রয়েছে বেশ কিছু দারুণ জুটির ইতিহাস। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ২১৯* রানের ইনিংস খেলার পথে মিরাজের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড ১৪৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছিলেন মুশফিক। সেদিন ব্যাটিংয়ের সময়েই দেখা গিয়েছিল অসাধারণ কেমিস্ট্রি বিদ্যমান মুশফিক ও মিরাজের মাঝে।

সেদিনের ছাপই যেনো ফিরে এলো আজ। ছাড়িয়ে গেল সেদিনের অষ্টম উইকেট জুটিকেও। দলের চাহিদা মিটিয়ে ধরে খেলা ও মেরে খেলার দারুণ মিশেল ঘটিয়েছেন দুজনেই। তবে একটু বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন মিরাজই। চলতি বিপিএলে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন মাত্র ৩৩ বলে, মুশফিকের ফিফটি হয় ৩৮ বলে।

স্টিয়ান ফন জিলের করা ১৫তম ওভারে ভাগ বাটোয়ারা করে বাউন্ডারি হাঁকান মুশফিক ও মিরাজ। প্রথম দুই বলে ৪ মেরে মিরাজকে স্ট্রাইক দেন মুশফিক। চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে মিরাজ আবার স্ট্রাইক ফিরিয়ে দেন অধিনায়ককে। শেষ বলে আবারও ৪ মারার মাধ্যমে সে ওভার থেকে ২০ রান পূরণ করেন খুলনা অধিনায়ক মুশফিক।

এ দুজনের জুটিতে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের বোলাররা সুযোগই পায়নি তেমন কোনো। নিখুঁত ব্যাটিংয়ে ইনিংস শেষ করার পথেই ছিলেন মিরাজ ও মুশফিক। কিন্তু ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে ২ রান নিতে গিয়ে পায়ে টান লাগে মিরাজের। যার ফলে ইনিংস অসমাপ্ত রেখেই মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।

তবে ততক্ষণে দলীয় ২০০ রান পার হয়ে যায় খুলনার। মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ৪৫ বলে ৫ চার ও ৩ ছয়ের মারে ৭৪ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। আর তাদের জুটিতে আসে মাত্র ৯১ বলে ১৬৮ রান। যা কি না চলতি বিপিএলে যে কোনো উইকেটের সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড।

তারা ভেঙে দিয়েছেন আন্দ্রে ফ্লেচার ও জনসন চার্লসের করা ১৫০ রানের জুটির রেকর্ড। মজার বিষয়, খুলনার বিপক্ষেই ১৫০ রানের জুটি গড়েছিলেন সিলেটের দুই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান ফ্লেচার ও জনসন। এবার কুমিল্লার বিপক্ষে সেই রেকর্ড নিজেদের করে নিলেন খুলনার দুই ব্যাটসম্যান মুশফিক ও মিরাজ।

শুধু চলতি বিপিএল বললে ভুল হবে, টুর্নামেন্টের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা জুটির রেকর্ড এটি। বিপিএল ইতিহাসে এর চেয়ে বেশি রানের জুটি হয়েছে মাত্র ৪টি। যার সবগুলোতেই ছিলো বিদেশি ব্যাটসম্যানদের নাম। এবারই প্রথমবারের মতো দুই দেশি ব্যাটসম্যান মিলে গড়লেন এত বড় রানের জুটি।

মজার একটি বিষয় হলো, বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি- তিন ফরম্যাটেরই সর্বোচ্চ রানের জুটির সেরা পাঁচের তালিকায় অন্তত একবার করে হলেও রয়েছে মুশফিকুর রহীমের নাম। কিন্তু বিপিএলের সেরা জুটির তালিকায় সেরা ত্রিশেও ছিলো না তার নাম। এবার মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে সেরা পাঁচে নিজের নাম তুলে নিলেন মুশফিক।

চলতি বিপিএলে সর্বোচ্চ রানের জুটিগুলো

১. মেহেদি হাসান মিরাজ ও মুশফিকুর রহীম (খুলনা টাইগার্স) – ১৬৮* বনাম কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স
২. আন্দ্রে ফ্লেচার ও জনসন চার্লস (সিলেট থান্ডার) – ১৫০ বনাম খুলনা টাইগার্স
৩. নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদি হাসান মিরাজ (খুলনা টাইগার্স) – ১১৫ বনাম সিলেট থান্ডার
৪. শোয়েব মালিক ও রবি বোপারা (রাজশাহী রয়্যালস) – ১০৬ বনাম খুলনা টাইগার্স
৫. ভানুকা রাজাপাকশে ও ইয়াসির আলি (কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স) – ১০৩* বনাম ঢাকা প্লাটুন

বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের জুটিগুলো

১. ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (রংপুর রাইডার্স) – ২০১* বনাম ঢাকা ডায়নামাইটস (পঞ্চম আসর)
২. ল্যু ভিনসেন্ট ও শাহরিয়ার নাফিস (খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলস) – ১৯৭* বনাম দুরন্ত রাজশাহী (দ্বিতীয় আসর)
৩. অ্যালেক্স হেলস ও এবি ডি ভিলিয়ার্স (রংপুর রাইডার্স) – ১৮৪ বনাম ঢাকা ডায়নামাইটস (ষষ্ঠ আসর)
৪. অ্যালেক্স ও রাইলি রুশো (রংপুর রাইডার্স) – ১৭৪ বনাম চিটাগাং ভাইকিংস (ষষ্ঠ আসর)
৫. মেহেদি হাসান মিরাজ ও মুশফিকুর রহীম (খুলনা টাইগার্স) – ১৬৮* বনাম কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স (সপ্তম আসর)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *