বাবর বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সী প্রধান শিক্ষক

বাড়ি থেকে স্কুল যাওয়ার পথে প্রতিদিন সমবয়সী ছেলেমেয়েগুলোকে দেখে কষ্ট হতো ওর। ওরা রাস্তায় পড়ে থাকা জিনিস কুড়াতো তখন, কেউ আবার বিড়িও বানাতো। ছেলেটা ভাবতো- কেন ওরা পড়ার সুযোগ পায় না? যদি ওদের জন্য কিছু করা যেত! বাবর আলির বয়স তখন দশ। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। সেই থেকে শুরু।

কলকাতা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার একটি স্কুলের ছাত্র বাবর। সকালে নিজে পড়ে আর বিকেলে অন্যদের পড়ায়। নিজের বাড়ির এক চিলতে উঠানই তার স্কুল। প্রায় ১৬ বছর ধরে এভাবেই নিজের শেখা অন্যদের শিখিয়ে এসেছে বাবর।

বাবর জানান, তাদের উঠানটাই ২০০২ সালে হয়ে যায় আনন্দ শিক্ষা নিকেতন। আর বাবর শুধু সেখানকার নয়, গোটা বিশ্বের কমবয়সী প্রধান শিক্ষকে পরিণত হয়। বাবরের স্কুল শুরু হয় মাত্র আট জন ছেলেমেয়ে নিয়ে। তাদের সঙ্গে ছিল তার নিজের বোনও। পাঁচ বছরের আমিনা খাতুন। বিকেল বেলা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে নিজের বাড়ির উঠানে পেয়ারা গাছের তলায় ওই ছেলেমেয়েগুলোকে লেখাপড়া শেখায় বাবর।

বাবরের বাবা-মাও পড়াশোনা শেষ করেননি। কিন্তু ছেলের এ উদ্যোগে তারা পাশে আছেন। তা নিয়ে মা-বাবার গর্বের শেষ নেই। কারণ একটি শিক্ষিত সমাজ গড়তে লড়ছে বাবর। নিয়ম করে গণিত, বিজ্ঞান, ভূগোল পড়াচ্ছে তাদের। আর শেখাচ্ছে ঝরঝরে বাংলায় লিখতে।

জানা যায়, মাঝে মাঝেই ক্লাস থেকে চক চুরি হতো। শিক্ষকরা ধরেও ফেলেন, এটা বাবরেরই কাজ। কিন্তু তারা যখন জানতে পারেন, কেন বাবর চক চুরি করে? এর পর থেকে প্রতি সপ্তাহে এক প্যাকেট করে চক স্কুলের শিক্ষকরা বাবরের হাতে তুলে দেন।

পরিবার ও স্কুলের চেষ্টায় সেই শিশুদের স্কুলের পোশাক, বই ও অন্যান্য পড়ার সামগ্রী দেয় বাবর। এ ধরনের শিশুর পরিবারের লোকজনদের বোঝাতে সমর্থ হয় বাবর। তারাও স্কুলে পাঠাতে রাজি হন বাচ্চাদের। তাই ২০১৫ সালে উঠান থেকে একটি বাড়িতে স্থানান্তরিত হয় বাবরের স্কুল। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে একটি বেসরকারি স্কুল হিসেবে স্বীকৃতিও পায় স্কুলটি।

গত ১৬ বছরে প্রায় ৫ হাজার শিশুকে শিক্ষিত করেছে বাবর। বেশ কয়েকজন আবার সেই স্কুলেই শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছে। ২৫ বছর বয়সী বাবর নিজে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছে। এখন ইতিহাসে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করছে।

বাবর আলিকে বিবিসি বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে ঘোষণা করে। এছাড়া ২০০৯ সালে বিবিসির একটি প্রতিবেদনে মাত্র ৯ বছর বয়সে নিজস্ব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকারী বাবর আলিকে সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হয়। ২০০৯ সালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সিএনএন-আইবিএন তাকে ‘রিয়েল হিরোজ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে। এনডিটিভি তাকে ‘ইন্ডিয়ান অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার প্রদান করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *